• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন |
  • Bangla Version
নিউজ হেডলাইন :
করোনা শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের বেশি, মৃত্যু ১ সুষ্ঠ ভোটে ডিজিটাল পদ্ধতি দরকার  অভয়নগরে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বাস্তবায়ন ও মনিটরিং সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ অভয়নগরে সরকারীভাবে ধান চাল সংগ্রহের উদ্বোধন অভয়নগরে মেধা অন্বেষন ও কুইজ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত অভয়নগরে দুদক কর্তৃক সততা স্টোরের অর্থ ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ আশুলিয়া টু চান্দুরা চৌরাস্তা যানজটের দুর্ভোগ,,,  অভয়নগরে মাধ্যমিক পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সংবর্ধনা যশোর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)অভিযান চালিয়ে ৪ বোতল বিদেশী মদ উদ্ধার সহ আটক -১ অভয়নগরে পায়রাহাট ইউনাইটেড কলেজ শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি অর্জনে আনন্দ শোভাযাত্রা নড়াইলের ইউপি চেয়ারম্যান  মোস্তফা কামাল’কে গুলি করে হত্যাকান্ডের ঘটনায় আটক -৪ সুষ্ঠ ভোটে ডিজিটাল পদ্ধতি দরকার আশুলিয়ায় ২৪ ঘণ্টায় ছয় জনের মরদেহ উদ্ধার ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যা বললেন মামুনুল হক যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ খেলা হচ্ছে না তাসকিনের, বিকল্প ভাবনায় হাসান দুই সিনেমা নিয়ে ফিরছেন আফরান নিশো

মহাসড়ক দখল করে শিশুপার্ক নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের বরিশাল নগরীর সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের লেকের উত্তর পাশ থেকে কাজীপাড়া সড়কের মুখ পর্যন্ত বড় একটি অংশ দখল করে শিশুপার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করেছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। মহাসড়কের সাড়ে ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৩০ ফুট প্রস্থের জায়গা দখল করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সড়ক ও জনপথের (সওজ) অনুমতি নেয়নি বিসিসি। এর মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিও দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মহাসড়ক দখল করে পার্ক নির্মাণ করায় বিসিসির নির্মিত ড্রেন ভেঙে ফেলা হয়েছে। এমনকি মহাসড়কের সঙ্গে যে শাখা সড়ক ছিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে সেখানকার বাসিন্দাদের মহাসড়কে উঠতে হলে ঘুরে আসতে হয়। বিষয়টি নিয়ে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। পার্ক নির্মাণে ১২ কোটি টাকার ওপরে ব্যয় ধরা হলেও সে বিষয়ে মুখ খুলছেন বিসিসির কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা, পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে দেশে ৮ নম্বর ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। যেকোনও মুহূর্তে ফরিদপুর থেকে বরিশালের পায়রা নদীর ওপর নির্মিত পায়রা সেতু পর্যন্ত সওজের জমি উদ্ধার এবং জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে। এ অবস্থায় সওজের কাছ থেকে অনুমতি না নিয়ে মহাসড়কের বড় একটি অংশ দখল করে শিশুপার্ক নির্মাণ করছে বিসিসি। এক্ষেত্রে মহাসড়ক ঘেঁষে পার্কে শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টিও ভেবে দেখা হয়নি।
সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়টি দেখেছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করছে। ফলে তারা কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। বিষয়টি তাদের কথাবার্তায় বোঝা গেলেও কার ভয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না তা জানাননি।
সওজের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পার্ক করতে তাদের অনুমতি নেওয়া হয়নি। পার্কটি নির্মিত হলে মহাসড়ক নির্মাণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সড়ক দখলের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন তারা।
সওজের কার্য-সহকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মহাসড়কের বরিশাল নগরীর সীমান্তবর্তী এলাকা গড়িয়ার পাড় থেকে দপদপিয়া সেতু পর্যন্ত স্থান ভেদে চওড়া ১২০ ফুট থেকে ১৮০ ফুট জমি সওজের। যা বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক করার সময় অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে আগে নির্মিত মহাসড়কের জন্য রয়েছে চওড়া ২৪ ফুট এবং বাকি জমিতে লেন ও ফুটপাত। পদ্মা সেতু চালুর আগেই সওজের জমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করে নির্মিত হবে চারলেন ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক। বর্তমানে বিসিসি মহাসড়কের ওপরই পার্ক নির্মাণ করছে।
যেখানে মহাসড়ক দখল করে পার্ক নির্মাণের কাজ চলছে ওই এলাকার কাউন্সিলর আনিছুর রহমান দুলাল বলেন, একেবারেই অযৌক্তিকভাবে মহাসড়ক দখল করে পার্ক নির্মাণ করছে বিসিসি। পার্ক নির্মাণের আগে আমার সঙ্গে কোনও ধরনের আলাপ-আলোচনা করেনি। হঠাৎ দেখি মহাসড়কের ডিভাইডার ভাঙা হচ্ছে। জানতে গেলে সেখানকার শ্রমিকরা জানান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ তার প্রয়াত মায়ের নামে শিশুপার্ক নির্মাণ করবেন। নগরীতে বহু জায়গা আছে, যেখানে শিশু পার্ক নির্মাণ করা যেতো। তবে কেন মহাসড়ক দখল করে শিশুপার্ক নির্মাণ হচ্ছে জানি না।
মহাসড়ক সংলগ্ন লেকপাড় সড়ক ও কাজীপাড়া সড়কের একাধিক বাসিন্দা বলেন, আগে মহাসড়ক থেকে যেকোনও যানবাহনে নগরীতে সহজে যাওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু মহসড়ক দখল করে নতুন করে ২০ ফুট চওড়া সড়ক করবে বিসিসি। সেখান থেকে পার্কের বাউন্ডারি ঘুরে তারপর মহাসড়কে উঠতে হবে। এরপর যেতে হবে গন্তব্যে। এতে ২০ফুট চওড়া যে সড়ক করা হবে তাতে যানজট লেগে থাকার সম্ভাবনা থাকবে। প্রতিনিয়র যানবাহন বাড়ছে। কিন্তু সেভাবে সড়কের প্রশস্ততা বাড়ছে না।
এখন মহাসড়ক দখল করে পার্ক নির্মাণ তাদের জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া মহাসড়কের সঙ্গে পার্ক। এখানে শিশুদের বিনোদনের চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় কান্নার আয়োজন বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। বিসিসির অপরিকল্পিত পার্ক নির্মাণের কারণে কমপক্ষে ২৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আয়ের পথ একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারাও পড়েছেন বিপাকে।
সেখানকার বাসিন্দা মোতাহার সিকদার বলেন, যেখানে বিসিসি পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করেছে সেখানে মহাসড়ক ঘেঁষে আমার জমি রয়েছে। সেই জমি নিয়ে বিসিসির সঙ্গে আদালতে মামলা চলার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। বিসিসি কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে মহাসড়কের সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা থাকা জমি একত্রিত করে পার্ক নির্মাণ শুরু করেছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশালের সদস্য সচিব রফিকুল আলম বলেন, শিশুদের জন্য পার্কের প্রয়োজন আছে। সেজন্য জাতীয় মহাসড়ক দখল করে পার্ক করতে হবে কেন?। বরিশাল নগরীতে বহু খাস জমিসহ বিভিন্ন স্থানে খালি জমি রয়েছে। সেখানেও শিশুদের বিনোদনের জন্য পার্ক করা যেতে পারে। আমার জানামতে, মেয়র একজন দায়িত্বশীল মানুষ। মহাসড়ক ছেড়ে অন্যত্র পার্ক নির্মাণ করে মেয়র দায়িত্বশীল মানুষের পরিচয় দেবেন বলে আশা করছি।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলার সভাপতি কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, মহাসড়ক দখল করে শিশুপার্ক নির্মাণ নগরবাসীকে জমি দখলে উৎসাহিত করবে। মহাসড়ক দখল করে সেখানে শিশুদের বিনোদন হাস্যকর। পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলে মহাসড়কে প্রতিনিয়ত চাপ বাড়বে যানবাহনের। এতে করে ওই সময় পার্ক ঘিরে দুর্ঘটনা ঘটতে থাকবে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন ও শহর) বিদ্যুৎ চন্দ্র দে বলেন, নগরের সড়কপথ নিরাপদ করার দায়িত্ব ট্রাফিক বিভাগের। মহাসড়কের ওপর শিশুপার্ক নির্মাণের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়টি ট্রাফিক বিভাগকে দাফতরিকভাবে অবহিত করেনি বিসিসি।
সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ফিরোজ আলম খান বলেন, মহাসড়ক দখল করে পার্ক নির্মাণের বিষয়টি সওজকে অবহিত করেনি বিসিসি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তাছাড়া সেখানে মহাসড়ক আইনও মানা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন বলেন, জাতীয় মহাসড়কের বাইলেনের ওপর শিশুপার্ক নির্মাণের জন্য সেতুমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে বিসিসি। ওই আবেদনের সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি। সিদ্ধান্ত আসার পর সড়ক ও জনপথ সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিসিসির স্থাপত্য প্রকৌশলী হাসিবুর রহমান মহাসড়ক দখল করে পার্ক নির্মাণের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নকশা তৈরি করা হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পার্কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু পার্ক নির্মাণে কত টাকা বরাদ্দ তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে বিসিসির এনেক্স ভবনের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, শিশুপার্ক নির্মাণে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১২ কোটি টাকার ওপরে। এটি মেয়রের নিজস্ব অর্থায়নে করা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন শিশুপার্ক নির্মাণে সওজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে দাবি করলেও তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলেছেন সওজের একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলছেন, কাউকে কিছু না জানিয়ে পার্ক নির্মাণ করছে বিসিসি।
প্রসঙ্গত, সওজের ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কের প্রায় ১১ কিলোমিটার নগরীর মধ্যে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বেশির ভাগ জেলার যানবাহন বরিশাল বিভাগের পাঁচ জেলায় যাতায়াত করে এই মহাসড়ক দিয়ে। যে কারণে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে রূপাতলী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়ক। রিকশা ও থ্রি-হুইলারসহ ছোট যান চলাচল নিরাপদ করতে বিসিসির প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণ ২০১২ সালে কাশীপুর সুরভী পাম্পের সামনে থেকে আমতলার মোড় পর্যন্ত দুই পাশে প্রশস্ত বাইলেন নির্মাণ করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.